শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২


মহাত্মা আহমদ ছফার দেহান্ত দিবসে: ছফাস্মৃতি

নব্বই দশকের তুঙ্গসময়  ঘোর গ্রীষ্মকাল তখন বাংলা একাডেমীর বটবৃক্ষতলায় আমাদের নিত্যদিনের আড্ডা চলিতেছিল মাথার উপরে  কাক সম্প্রদায় কাকা স্বরে  হল্লা করিয়া থাকে তাহাতে আপত্তি নাই কিন্তু তাহারা আমাদের  মস্তকে পুরিষ বর্ষণপূর্বক হল্লায় করিয়া থাকে ইহাতে জোর আপত্তি রহিয়াছে উপরন্তু তখন আমরা আমাদের সিরিয়র সকল কবিদের কবিতা লইয়া যারপর নাই অসন্তুষ্ট চঞ্চল কবিদের মার্কিং করেছে তাহাতে প্রায় সকলই ফেল করিয়াছেন  নজরুল তো অবশ্যই, ঠাকুর টেনেটুনে একমাত্র জীবনানন্দ আর চঞ্চল নিজে পাশ সেই সময় আমরা  শাহবাগে, পিজিতে, টিএসসিতে,বাংলা একাডেমীর বটবৃক্ষতলায় বসিয়া সকলের নামে নিত্য গীবত গাহিয়া থাকি আমরা বলিতে চঞ্চল আশরাফ, মুজিব ইরম, কবির হুমায়ুন, জেনিস মাহমুন, অনু হোসেন ইশাররফ হোসেন প্রমুখ মাঝে মাঝে সরকার আমিন যুক্ত হইয়া নবীদের মতো বাণী নাজেল করিতেন একদা এই বটবৃক্ষের তলায় আসর চলিতেছেল এমন সময় গ্যাটে ইনস্টিটিউটের একটি মাইক্রোবাসকে আমাদের আড্ডাস্থলের দিকে ধাবিত হইতে দেখা গিয়াছিল মাইক্রোবাস আসিল ভেতরে মহাত্মা আহমদ ছফা তিনি নামিলেন ঘোর গ্রীষ্মে তাঁর গলে কম্বল হাতে একগাদা আমন্ত্রণপত্র তাঁর বা জর্মণীর কোন মহাত্মার অনুষ্ঠানের বোধ হয়- এতদিন পর মনে নাই আমরা তেমন গা করিলাম না উপরন্তু কয়েক দিবস পূর্বে তিনি কমলকুমার মজুমদার বিষয়ে বিষবাক্য বলিয়াছিলেন আমার মন তাঁহার উপর প্রসন্ন ছিল না কেননা, তখন আমরা ধর্মীয় পুস্তকের বদলে ভোরে তাহাকে পাঠ করিয়া থাকি যারপর নাই ভক্তি কথা চলিল সুযোগ হাতছাড়া করিলাম না বলিয়া বসিলাম, গাভীবৃত্তান্ত কোন পদের  লেখা তিনি খানিক চুপ রহিলেন তারপর কহিলেন, ঠিকাছে, আমি পারি নাই আপনারা ষাড়েরা ষাড়বৃত্তান্ত লিখেন কহাবাহুল্য, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারগিরি করিয়া বেড়াই তাঁহার হাঁপানীর টান উঠিল চলিয়া গেলেন
২.
তখন আজিজে মহাত্মা বিজুর দোকান সবে জমিয়া উঠিয়াছে মৎ প্রণীত শব্দপাঠ দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সেই অহংকারে মহাত্মার দোকানের সামনে খাড়াইয়া একদা বাতাস খাহিতেছি দেখিলাম আহমদ ছফা আসিতেছেন দেখিলাম, তাঁহার হাতে উন্মুক্ত ছোরাখ- জিজ্ঞাসি, ছফা ভাই, কাহিনী কী? তিনি জিজ্ঞাসিলেন, আপনে খোনকারকে দেখছেনকেন কী হইয়াছে তিনি উত্তেজিত হইয়া বলিলেন, আমি তাহাকে মারিতে চাই কারণ জিজ্ঞাসিলে ঘটনা বলিলেন আমি বলিলাম তিনি আপনার নামে বাজে কথা বলিলে আপনিও বলুন ছোরার তো কাম নাই বিষয়টা ব্যক্তিগত না বাংলা সাহিত্যে খোনকার পদবির কোন কবি নাই ও থাকতে পারে না- ইহারা বাংলা সাহিত্যের বালা আমি বাংলা সাহিত্য থেকে বালামুসিবত দূর করতে চাই তিনি গজগজ করিয়া চলিয়া গেলেন সে অবধি বাংলা সাহিত্যে সকলেই বর্তমান রহিয়াছেন
৩.
মনে ভাবিয়া দেখিলাম, তাঁহারা সকলেই মহাজন তাঁহারা মহালীলা সম্পন্ন করিয়া স্বর্গত হইয়াছেন আর সাহিত্যে বর্তমান আছেন আমাদেরও তেজ কমিয়াছে বৈকালে মন খারাপ করিয়া শাহ আব্দুল করিমের গান শুনিয়া থাকি আর মহাজনদের কিতাবসমূহ ভক্তিভরিয়া পাঠ করিয়া থাকি মীরার প্রভূ নিশ্চয় আমাদের ক্ষমা করিবেন (আমেন)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন