শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১২

কবিতাগুচ্ছ- ৮














সুফি ড্যান্স

আজ এই মন উতলা ইস্তাম্বুলে, ঘনায়মান সন্ধ্যায়।

পার হয়ে এসেছি তরুবন হিজল, কৃষ্ণের তমাল
প্রাণ থর থর কাঁপিছে আমার মিলন আশায়।

তারা গাইছে গান মিলনের।

তারা তারার তলে পরেছে জামা শাদা শাদা
আর নাচছে ঘুরে ঘুরে ইস্তাম্বুলে
হাত তুলেছে উর্ধলোকে প্রাণ আকুল প্রেমে
যেন মেলেছে পাখা এই জোৎস্না রাতে।

কোমরে কালো ফিতা,ফিতা নয় বন্ধন এই সংসার লোকের
আকুপাকু পরাণ ছুটিতে বন্ধন।

আমি থাকি লালনের দেশে পাখি নিয়ে শার্টের নীচে
আমারও আত্মা যেতে চাইছে উর্ধলোকে
এই তোমাদের ভূমি হতে
তুর্কি ভাইয়েরা আমার ধরা পড়েছ খাঁচায়, ইস্তাম্বুলে।


গঞ্জে গুমরি উঠছে গান

গঞ্জে গুমরি উঠছে গান। মৎস বাজারে।

তারা মীন। জলে ছিল। জলকুমারী।
তারা আজ এলুমিনিয়ামের থালায় থালায়

খাবার টেবিলের উদ্দেশ্যে।

কোনকুমারী তোমার বিয়ের এত্তেলা এসেছে
দৈনিকের পাতায়, গুঞ্জন লেগেছে গঞ্জে

কার টেবিলে যাও কুমারী?

প্রাণ আমার গুমরি যায়।


প্রেমিকা

তোমার প্রেম করেছি গোপন, হাটে আর বাজারে
চালাক সেজেছি হাটুরেদের কাছে,যদি ঠকি যাই
এই ভয়ে, মদন যে দেশের প্রেম দেবতার নাম।

অপ্রেমিক কে স্মার্ট ভাবে এই দেশে
কোন সাহসে বলো দেখি তোমাকে
তোমারে লিখি কবিতা, প্রেমিকা আমার।

কবিতাগুচ্ছ-৭



জ্ঞান নদী পারাপার


গুরু পার হবেন জ্ঞান নদী

আমরা এসেছি আজ নদী তীরে
             দেখে ঢেউ থরহরি, উপরন্তু শীত

আমরা তীরে বসে গুনছি ঢেউ আর
ভাবছি জলেব মধ্যেই আছেন মৎস্যকন্যাগণ

আমাদের পাঠে মোটেই মন নেই
কী করে পার হবো জ্ঞান নদী
গুরুই হাবুডুবু

আমরা শর্টকার্ট পারের কথা ভাবছি

ওই যে দূরে রাখাল বালক,তাকে ডাকো
সে বানিয়েছে ভেলা কলাগাছের
তাই চড়ে ওপারে যাবো, জ্ঞাননদী পার হয়ে

আমরা এসেছি জ্ঞান নদী পার হয়ে
দ্যাখ,জল কাদা কিছুই গায়ে লাগেনি



নগর দুয়ারে গৌতম

নগর দুয়ারে কারা হাসে কাচঝরা
তারা কি জরা, মৃত্যুকে দেখেনি ?

দূর থেকে ধেয়ে এসে অগ্নিনদী
এ জনপদ মুছে দেবে
কালোজ্বরের কাঁপিয়ে মেদিনী
সকল মন্দির ভেঙ্গে দেবে
আর মৃত্যু মৌমাছির মত
শুকনো কালো ডানায় উড়ে এসে
নিয়ে যাবে ছায়াপ্রাণ

নগর দুয়ারে কারা হাসে কাচঝরা
তারা কি মৃতু কে দেখেনি ?

যযাতিও ফের ফিরে পেয়েছিলেন পুত্রের যৌবন
অবশেষে জরা তাকেও নিল
আজও মহাভারতের শুকনো পাতায় পাতায়
জেগে আছে তার হাহাকার

নগর দুয়ারে কারা হাসে কাচঝরা


ফুঁ-এর বাড়ি


নানা বাড়ি গেছিলাম বহুদিন পর নানা পীর
কাষ্ঠ দিয়ে বানিয়েছিলেন তাঁর ঘর
এই বার গিয়ে দেখি ইষ্ট দিয়ে তাঁরা তুলেছে দালান
জিগ্ঞাসি কী বৃত্তান্ত, কী খবর ?
মামা বলেন, জান তো বাপের ছিল ফুঁ-এর তেজারতি
ফুঁ-এই বানিয়েছি এই ঘর 



বেহুদা

না লইলাম আল্লাজির নাম, না লইলাম নারীর

কবিতাগুচ্ছ- ৬


আহমদ সিরাজের সাথে শেকড়ে


গান পাতার আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম এতোকাল
আজ তাল পেয়ে বেজে উঠেছি সহসা
মনুতীরে

কী যে চুপি চুপি থাকা আনমনে, আপনমনে
শহরে শহরে ব্যাধেরা নেমেছে শব্দ শিকারে
তীরের ফলায় রক্তাক্ত সারাবন
বন্ধুরা যারা ছিল, মরেছে

আর আমি পালিয়ে উড়ে যাওয়া,লুকিয়ে থাকা
সামান্য কণ্ঠ পাখি, নিঃসঙ্গ ছিলাম,একা ছিলাম
                                  লুকিয়ে ছিলাম

আজ তাল পেয়ে এসেছি লোকালয়ে
গেয়ে উঠেছি গান মনুতীরে

ও গান পরাণ গেয়ে চল




আগুন শিকারী


ছাইয়ের ভেতর লুকিয়ে ছিল, যেই পড়তে গেছি ছাইভষ্ম
অমনি ছড়িয়ে আগুন পাতায় পাতায়
সবখানে

মৃতেরা রেখে গেছে লুকিয়ে আগুন ছাইভষ্মে
আর আমি উৎসুক বালক কী ভেবে পড়তে গেছি
ছাইভষ্ম কালো অক্ষরে
কী জানতাম তাতেই ছড়াবে আগুন

সবখানে- আমার ভেতরে


মা


এখনও যদি মা বলে ডাকি
কবরেরও দরোজা খুলে যাবে

মা ডাক এমনই মোহন 

কবিতাগুচ্ছ- ৫




মানে


সেই যে বলেছিলে হাওয়া দুলিয়ে -
       যা পাগল এসবের কি কোন মানে আছে
       যা কিছু মানে, টীকা টিপ্পনী,ফুটনোট, ভাষ্য ব্যাখ্যা
       সকলই বানানো, গাঁজাখোরি
       যারা খুঁজেছে তারাই উচ্ছন্নে গেছে 
       ভেবে দেখ বুদ্ধুর জীবন
       সিংহাসন ছেড়ে একা একা পথে পথে 
       আর আমাদেরও তাই শিখিয়েছে

কিন্তু, আমাদের আছে নখর ও শিং
আমরা তাই দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছি
 সহস্র বৎসর ধরে নিজেদের জীবন

আজ নিজেকে ছিঁড়ে খুঁড়ে জেনেছি
এ সবের কি কোন মানে আছে ?
মানে ছিল ? থাকার সম্ভাবনা আছে ?

যা কিছু নকল, যা কিছু বানানো
ছিঁড়ে চল, ফেড়ে চল ওরে আমার মন 



ফেরা


আজ বহুদিন পর গান এলো ধুলোপায়ে,ধূলিমলিন সন্ধ্যায়
চলেছেন দিনমনি অস্থাচলে,ক্লান্ত, মৃদুপায়

ও গান কোথায় ছিলে, কতদিন রক্তাক্ত দিন

কত যে কাতর আমি

ও গান আমাকে একলা ফেলে কোথায় ছিলে ?
আজ ফিরে এসেছো সন্ধ্যায়, রক্ত ধুলো মাখা পায় !

ও ছায়া কোলে এসো আবার মিলি
মৌনতার দীর্ঘরাতে



আলুবাদ্য


শামীম কবির ঘুমাতে গেছে বেশ আগে
আমিও ঘুমাতে গেছি বিষ্যুদবার শেষরাতে
শুক্ররারে ঘুম আর ভাঙ্গছে না
বাজিয়ে যাচেছ ফোন হামীম কামরুলশওকত হোসেন
শোয়াইব ভাই লেখা.. শোয়াইব ভাই লেখা.. শোয়াইব ভাই লেখা..
শামীম বেশ ঘুমাতে পারছে,ফোনে ওকে পাচেছ না

কবিতাগুচ্ছ- ৪


ফিরে চলা, ধুলোপায়ে


ফিরে যাওয়ার কথাই ভাবছি,ধুলোপায়ে

পিছনে রইল পড়ে দীর্ঘপথ,উটের বেদনা নিয়ে
পথ চলার কষ্টের কথাই ভাবছি

এই যে পা কেটেছে পাথর ও কাঁটায়,তার উপর ধুলোর আস্তরণ
রক্ত তাকেও যায় না চেনা,শুধুই হাঁটার স্মৃতি
পথ হারানোর স্মৃতি
কী লাভ জমিয়ে স্মৃতিভারফিরে চলা সেই ভালো,
স্মৃতিহীন,ধুলোপায়ে



পিতারযাত্রা

পিতা চলেছেন অস্তাচলে,আমরা তার পুত্র কন্যারা দুঃখিত মুখে
আতস কাচ ধরেছি তার সন্মুখে,বেদনা উঠছে  ফুপিয়ে,
ভাপ পড়ছে গায়ে,সামনে তার অরণ্য-গহনবন
অগস্থ্যযাত্রা, আজ অবেলায়

দারাপুত্র পরিবার কেউ যাবে না সাথে  ধর্মকথা
সত্যি হতে চলেছে আজ,অভিমানে ফুলে ফুলে উঠছেন পিতা
উপরন্তু এই দেশে পানীয় এমনকী খাদ্যকণাও দেবে না সাথে
যাত্রা ক্ষুধাপরিজন কাতর

কী আছে আমাদের দেয়ার,বিলাপ ছাড়া!




অস্তিত্ব


যে ছিল, আজ নেই,সেও আছে
এই বাতাসের ভেতর আছে,আছে সন্ধ্যার ভেতর

নাই বলে কিছু নেইআছে, সকলই আছে

যে ছিল নালন্দায়,তক্ষশীলায়,আজটেকে, ইনকায়
সেও আছে, আমাদের ভাবনার ভেতর,বোধের ভেতর

যে মুদ্রা হারিয়েছে দেবালয়ে তীর সন্ধ্যায়
যে গানে হারিয়েছে দরবার হতে
সেও আছে,লোকালয়ে আছে,পাখির কণ্ঠে আছে
সকলই আছে
কিছুই হারায় না,পারে না হারাতে
সময় ধরে রাখে গোপন মায়ায়

কবিতাগুচ্ছ- ৩


বগুড়ার পথে

বগুড়ার পথে পথে পড়ে আছে নিঃসঙ্গতা,ধুলার হাহাকার
ও আমার পুণর্ভবা তোমাকে নিয়ে ভাবি
তুমি কি এমনই আছ আমাকে ছাড়া

তোমার সাথে দেখা এক ম্লান বিধুর সšধ্যায় 
পুণ্ড্রে, যখন নিভে গেছে আলো নগরে আর
ইটের ফাঁকে ফাঁকে বাতাসের হাহাকার
সেই বেদনার ক্ষণে তুমি হাসিমুখে জলভারানত
আমি অবাক বিষ্ময়ে স্লিম তোমাকে দেখি

ও আমার প্রেম তোমাকে নিয়ে

তারপর ঘুরিয়ে গাড়ির চাকা ফিরেছি
ধুলা উড়িয়ে তোমার পথে
ও আমার পুণর্ভবা তোমাকে ঘিরে আছে নিঃসঙ্গতা

আমার হাহাকার


ন্ধুদের প্রত্যাবর্তন 


ন্ধুরা সবাই গেছে হাওয়ায় মিলিয়ে
বিলাতে,চীনে
আমিও দিয়েছি মন চাষাবাসে
ফলিয়েছি চীনেভুট্টা,বিলাতি বেগুন
আর ধান
হঠাৎ দেখি ধান ক্ষেতে সারি সারি শালিক
šধুরা তবে কি আসছে ফিরে?


পিতা যেদিন গেলেন


আকাশ চিরে যখন চলে গেল বিদ্যুৎ রেখা
আমি আমার স্ত্রীকে বললাম,দেখ পিতা গেলেন

যখন বাড়ি পৌঁছলাম তখন কান্নার রোল
আমিও শরীক হলাম

যখন তাঁকে নামানো হল কবরে
আকাশ ভেঙে নামলো বৃষ্টি
দেখ আমি স্ত্রীকে সত্যি বলেছিলাম